চাঁদের অবস্থান ভূগোল দিয়ে
আসুন চাঁদের উদয় অস্ত সময়টা ভূগোল দিয়ে ব্যাক্ষা করি,,,,,
,
যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর সকল জায়গায় একই সাথে দিন ও রাত হয়না। বরং এক স্থানে যখন রাত তখন অন্য স্থানে দিন। তাহলে কুরআন সুন্নাহ ও ফিকহের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই দিনে সমগ্র বিশ্বে রোযা, শবে কদর, ঈদ, আরাফা, কোরবানি ইত্যাদি ইবাদত পালন করা কিভাবে সম্ভব?
,
এই প্রশ্নের জবাবটি পুরোপুরি ভৌগলিক জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত। তাই এই প্রশ্ন জবাব জানার পূর্বে ভৌগলিক কিছু ধারনা অর্জন একান্তই দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই জানা প্রয়োজন, প্রতি চান্দ্র মাসের নতুন চাঁদ সকল সময় পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে দৃষ্টিগোচর হবে? নাকি বিভিন্ন মাসের চাঁদ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেখা যাবে?
,
উত্তর ঃ-
এই বিষয়ে ভৌগলিক গবেষনার ফলাফল হলো, প্রতি চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ সব সময় সর্বপ্রথম মধ্যপ্রাচ্যের কোনো না কোনো দেশে দৃষ্টিগোচর হবে। কারন চান্দ্র মাসের প্রথম দিনে চাঁদ ও সূর্য প্রায় একই সময়ে পূর্ব দিগন্তে (জাপানে) উদিত হয়। এবং এর বিপরীত মেরুতে অর্থাৎ দক্ষিন-পশ্চিম আটলান্টিক মেরুতে সূর্য অস্ত যাওয়ার প্রায় ৪৯ মিনিট পরে চাঁদ অস্ত যায়। এর অর্থ হলো, সর্ব পশ্চিম দিগন্তে সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেও প্রথম তারিখের চাঁদ ৪৯ মিনিট আকাশে থাকে। এ সময় সূর্যাস্তের পর দিগন্তে চাঁদের যে কিঞ্চিৎ অংশটুকু সূর্যের আলোয় প্রতিফলিত হয় তাকেই আমরা নতুন চাঁদ হিসেবে দেখি। প্রথম দিনের চাঁদ, সূর্যাস্তের ৪৯ মিনিট পরে অস্ত যায় বলেই ২য় দিনের চাঁদ, সূর্য উদয়ের ৪৯ মিনিট বিলম্বে পূর্বাকাশে উদিত হয়। কারন আকাশের যে দিগন্ত রেখা আটলান্টিকের জন্য অস্ত স্থল, আবার সে দিগস্ত রেখাই জাপানের জন্য উদয়স্থল। এভাবে প্রতিদিনই চন্দ্র উদয়ের বিলম্বতায় ৪৯ মিনিট করে যুক্ত হতে থাকে। একারনেই ২৯ দিনে চাঁদকে ২৯টি ন্থানে উদয় হতে দেখা যায়। আবার সাড়ে ২৯ দিন পরে চাঁদ ২৪ ঘন্টা ঘুরে এসে পরবর্তী চন্দ্র মাসের ১ তারিখে আবার নতুন করে সূর্যের সাথে প্রায় একই সময়ে উদিত হয়।
,
আসুন আরো একটু বিস্তারিত আলোচনায় মনোনিবেশ করি,,,,,,
ভৌগলিক ভাবে প্রমানিত যে, গ্রীনিচমান সময়ের (GMT) দিক থেকে পৃথিবীর সর্ব প্রথম সূর্য উদয়ের দেশ হলো জাপান। যার ভৌগলিক অবস্থান ১৪২ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাগিমাংশ এবং ৩৭.৫ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ। আর অস্ত স্থল দক্ষিন পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর এর ভৌগলিক অবস্থান হলো ৩৮ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাগিমাংশ এবং ৩৭.৫ দক্ষিন অক্ষাংশ। এই উদয় ও অস্ত স্থলের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ১২ ঘন্টা এবং অবস্থানগত দূরত্ব ১৮০ ডিগ্রী। কারন প্রতি ১ ডিগ্রীতে সময়ের ব্যবধান ৪ মিনিট।
চান্দ্র মাসের এক তারিখে চাঁদ ও সূর্য প্রায় একই সময়ে জাপানে উদিত হয়ে ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করে সন্ধায় সূর্য যখন আটলান্টিক অঞ্চলে অস্ত যায়, চাঁদ তখনও আটলান্টিকের আকাশে ৪৯ মিনিট ধরে অবস্থান করে। এই ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে চাঁদ ও সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যবধান ৪৯ মিনিট হলে, এর অর্ধেক অর্থাৎ ৯০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে প্রায় ২৪ মিনিট।
মধ্য প্রাচ্যের (ইয়েমেন,রিয়াদ,বাগদাদ) অবস্থান ৪৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাগিমাংশে হওয়ায়, উদয় স্থল জাপান ও অস্ত স্থল আটলান্টিকের সাথে মধ্য প্রাচ্যের ভৌগলিক অবস্থানের ব্যবধান ৯০ ডিগ্রী। যে কারনে মধ্য প্রাচ্যে যখন সূর্যাস্ত হয়, তখন চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে ২০ থেকে ২৫ মিনিট অবস্থান করে। ফলে চান্দ্র মাসের ১ তারিখ চাঁদ সব সময় সর্বপ্রথম মধ্যপ্রাচ্যের আকাশেই দৃষ্টিগোচর হবে। এবং ক্রমান্বয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ সমূহে সূর্যাস্তের পরে চাঁদের স্থায়িত্ব আকাশে বেশী সময় থাকবে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্বাঞ্চলীয় দেশসমূহ উদয়স্থলের নিকটবর্তী হওয়ায়, সূর্যাস্তের পরে সেখানকার আকাশে ১ তারিখের চাঁদের স্থায়িত্ব কম সময় ধরে থাকে এবং চাঁদ দিগন্তের আকাশে কম উঁচুতে থাকে বলেই উদয়স্থলের নিকটবর্তী দেশ সমূহ যেমন, পাকিস্থান, ভারত, বাংলাদেশ, চীন বা জাপানে কখনই চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ দেখা যাবে না।
Comments
Post a Comment
Thanks For Comment